Himshital Chokh | Bengali Love Story | Bengali Magazine

হিমশীতল চোখ
লিখেছেন: মধুমিতা

প্রেমটা শুরু হয়েছিল যাদবপুর ইউনিভার্সিটি এর সেকেন্ড ইয়ার থেকে... 
অপূর্ব
অপূর্ব চ্যাটার্জী,কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং,নিবাস -রাসবিহারী 
আর রায়া 
রায়া ভট্টাচাৰ্য,কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং,নিবাস-গড়িয়া 

প্রথমে আলাপচারিতা,বন্ধুত্ব,তারপর হটাৎ ভালোলাগা অতঃপর এক মিষ্টি বিকেলে একসাথে হাঁটতে হাঁটতে,হটাৎ প্রপোজ...

himshital chokh









রায়া,পুরো ব্যাপারটা উপলব্ধি করতো বটে কিন্তু এরকম বেশ রোমান্টিক প্রপোজ,তার গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠলো ||

কলেজ এর দিনগুলো কেটে গেল এক্কেবারে ঝড়ের গতিতে,ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে দুজনের হাতে নামী কোম্পানির অফার লেটার ||

জীবন এখন অনেক বেশি ব্যাস্ত,দুজনের অফিস-মিটিং-পার্টি ইত্যাদি ইত্যাদি,তার মধ্যেই এক ডিসেম্বর এর বিকেলে চারহাতের মিলন ঘটলো মহাসমারোহে ||

রায়া এর পোস্টিং ব্যাঙ্গালোর,তাই অপূর্ব ও নিজের বদলি নিয়ে... 

দুজনের সংসার-অফিস ইত্যাদি সামলে উইকেন্ড এর দিনদুটো যেন ভীষণ ভীষণ দামি ||
এরকমই এক শনিবার দুজনে গেল শপিং করতে,রায়া যখন নিজের পছন্দের একটা জিন্স হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে,চোখে পড়লো এক অপরিচিত ভদ্রলোকঃ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,রায়া তাচ্ছিল্য সহযোগে এড়িয়ে গিয়ে এগোলো কসমেটিক এর সেকশন এর দিকে,সবে নিজের পছন্দের শেড ট্রাই করবে,আবার সেই চোখ জোড়া,কেমন যেন হিমশীতল, 
রায়া এবার একটু কেঁপে উঠলো,অপূর্ব রয়েছে মিউজিক সেকশনে,রায়া পা বাড়ালো সেই দিকে ||
থরে-থরে সাজানো মিউজিক ডিপার্টমেন্ট,নিজেদের পছন্দ মতো সংগ্রহ করতে করতে দুজনেই অন্যমনোস্ক হয়ে পরলো,রায়া রবীন্দ্রসংগীত এর কালেকশন এর থেকে একটা পছন্দের সিডি তুলে নিয়ে নাড়াচারা করছে,চোখ আটকে গেল এক্কেবারে কোণায় দাঁড়ানো সেই অচেনা চোখে... 
" অপূর্ব "...রায়া আচমকা খামচে ধরলো হাত ||
রীতিমতো কাঁপছে সে,অপূর্ব ঘাবড়ে গেল... 
" কি হয়েছে,অমন করছো কেন ? শরীর খারাপ লাগছে ? বাড়ি যাবে ? "
রায়া মাথা নাড়লো,ফিসফিস করে বললো,পুরো ঘটনা,অপূর্ব চারিদিকে তাকালো,নাহ,বিবরণ অনুযায়ী সে রকম কোনো ব্যাক্তি কাছেপিঠে নেই ||

শপিং সেরে,ফুডকোর্ট এর জম্পেশ ডিনার আর সাথে একগুচ্ছ মোবাইল বন্ধী ছবি ... 

অপূর্ব গাড়ি পার্কিং এর দিকে এগোলো,রায়া মোবাইল বের করে,ফোন লাগালো নিজের মা কে... 
ফোন রিং হচ্ছে-রিং হচ্ছে,নাহ ধরলো না,চোখ গেল উল্টো দিকের একটা ছোট্ট দোকানের দিকে,রায়া ফ্যাকাসে হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে... 
সেই হিমশীতল চোখজোড়া ||

রায়ার ঘুম ভাঙলো বেশ দেরিতে,ঘুম থেকে উঠে দেখলো বেশ বেলা হয়েছে,মাথাটা বেশ ভারী সঙ্গে গা-হাতেপায়ে ব্যথা,রাতে সে বাড়ি ফিরলো কখন ?? 
অপূর্ব চা আর ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলো,রায়া জানতে পারলো যে বিগত রাতে সে হটাৎ ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়... 
অপূর্ব আর শপিং মলের আরও কয়েকজন মিলে তাকে সামলেছে ||
রায়া খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ||

ডাক্তার পরামর্শ দিলো কয়েকটা দিন একটু রেস্ট নিতে,অফিস-সংসার সামলাতে গিয়ে বোধহয় স্ট্রেস বেশি হচ্ছে ||

সোমবার অপূর্ব অফিস গেল,রায়া একটা ম্যাগাজিন নিয়ে ফ্ল্যাট এর ব্যালকনিতে বসে আনমনা হয়ে পাতা উল্টে চলেছে... 
হটাৎ চোখ আটকে গেল... 
আরে সে কি ঠিক দেখছে ?? 
ম্যাগাজিন এর পাতা জুড়ে সেই হিমশীতল চোখ ||
ম্যাগাজিনটা ছুড়ে ফেলে,দৌড়ে ঘরে ঢুকে রায়া অপূর্ব এর নাম্বার ডায়াল করলো... 
রিং হয়ে গেল মোবাইল 
আরও একবার 
আরও একবার... 
রায়া তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাটে চাবি দিয়ে নিচে নেমে এলো,শরীরটা ভালো নয় একেই তারউপর আবার টেনশন,রায়া ঠিক করলো অপূর্ব না ফেরা অবধি সে একা একা ফ্ল্যাটে আর যাবে না ||
ফ্ল্যাট এর পাশেই একটা নামী কফিশপ,রায়া কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লো,অপূর্ব কল ব্যাক করলে,তাকে সব বলতেই,ওপর প্রান্ত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে জানালো ||

প্রায় ঘন্টাখানেক কফিহাউসে কাটালো রায়া,অপূর্ব এলে দুজনে একসাথে ফ্ল্যাটে ঢুকলো ||
দুজনের কপালে চিন্তার ভাঁজ, ব্যাপারটা ঠিক কি আসলে ?? রায়া কি কোনো মানসিক রোগের শিকার হোলো ?? 
পরেরদিন অপূর্ব অফিসে গেল,রায়া স্নান সেরে,বারান্দায় টবের গাছে জল দিচ্ছে,কলিংবেল জানান দিল কেউ এসেছে,কিছুক্ষন আগেই একজন ডেলিভারি বয় ফোন করে হোমডেলিভারি এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো,রায়া বিলের এমাউন্ট হাতে নিয়ে,দরজা এর আইল্যাচে চোখ রাখলো... 
অপরদিকে সেই হিমশীতল চোখ ||

রায়ার জ্ঞান ফিরলো,চিৎকার আর মোবাইলের রিংটোনে... 
ডেলিভারি বয়,বেশ বিরক্ত,
খাবার নিয়ে টেবিলে রেখে,রায়া সিকিউরিটিকে ফোন করলো... 
" নেহি মেমসাহেব,আপকা ফ্ল্যাট মে উঃ ডেলিভারি বয় কে সিবা অউর কৈ নেহি আয়া "||

কাকে বলবে-কি বলবে-কি হবে-কেন হচ্ছে দুজনের কাছে কোনো উত্তর নেই ||
রায়া এর চোখের নিচে কালি যেন আরও গাঢ় হচ্ছে দিন দিন ||

মনের সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে,রায়া শহরের এক নামজাদা সাইকোলজিইস্ট এর এপয়েন্টমেন্ট সেট করলো,অপূর্ব একটা ক্যাজুয়াল লিভ নিয়ে,দুজনে গেল চেম্বারে ||
কিছু হালকা গতানুগতিক প্রশ্ন,মনের ডাক্তার বিশ্রাম নেবার পরামর্শ দিলেন সাথে যদি সম্ভব হয় তাহলে একটা ছোট্ট " চেঞ্জ "... ||

বছরের মাঝ বরাবর " চেঞ্জ " এ যাওয়া,বেশ অসম্ভব ব্যাপার,সুতরাং রায়া কিছুদিনের রেস্ট নেওয়াটাই সঠিক মনে করলো ||
মুশকিল হোলো ফ্ল্যাটে একা থাকা নিয়ে,অপূর্ব অফিসে গেলে 1500 স্কয়ার ফিট এর ফ্ল্যাট পুরো ধুধু প্রান্তর,যদিও এর আগে অনেক বার রায়া একা থেকেছে,কিন্তু এখন ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা||
নিজের মন শক্ত করে নিলো রায়া,অফিসে বেশ কয়েক দিনের " সিক লিভ " এর জন্য ইমেইল টাইপ করে CC এবং BCC ও করলো ||
অপূর্ব ডাইনিং স্পেসে বসে টিভিতে কোনো একটা হিন্দি মুভি দেখছে,রায়া রান্নাঘর এর দিকে পা বাড়ালো ||

ফ্রিজ খুলে দেখে নিলো সব্জি কি কি আছে,চিকেন বের করলো,রাতে হালকা স্টু আর ডালিয়া,হেলদি ডায়েট ||

রান্নাঘরের জানলা দিয়ে বাইরে উঁকি দিল,একটা কুকুর খুব চিৎকার করছে,এক পথচারী কে দেখে,রায়া সবে জানলা বন্ধ করবে,পথচারী মুখ তুলে তাকালো,সেই হিমশীতল চোখ ||
রায়া কেমন যেন স্ট্যাচু হয়ে গেল,নড়তে-চিৎকার করতে ভুলে গিয়ে অপলক দাঁড়িয়ে রইলো,পথচারী যেন কিছু বলতে চায় তাকে,হিমশীতল চোখে যেন অনেক অনেক না বলা কথা ||

" রায়া... " এই কি করছো তুমি ?? কি গো ?? " আজ কি স্পেশাল মেনু,এতক্ষন লাগছে ম্যাডাম ?? একে রেস্ট নেওয়া বলে ?? "

অপূর্ব এর কথাগুলো কানে এসে ঢুকতে,রায়া সম্বিৎ ফিরে পেল,রাস্তা ফাঁকা,কোথায় কে ?? 

পরের দিন অপূর্ব অফিসে গেল,রায়া ব্রেকফাস্ট খেয়ে টিভি চালিয়ে খবর শুনছে,মোবাইলে রিংটোন... 
" হ্যালো,এখন কেমন আছিস রে ?? রেস্ট নে ঠিকমতো,জানিস VP পরের মাসে যাচ্ছে টোকিও,আজ ফাইনাল কথা হোলো,প্রজেক্ট এক্কেবারে হাইফাই... "
পাপিয়া, অফিস কলিগ,আরও কিছু কথা... 
রায়া মোবাইল রেখে,টিভি অফ করে,শোয়ার ঘরে এলো,
মা কে একবার বলবে ব্যাপারটা ?? 
চিন্তা করবে বটে,কিন্তু পরে যদি জানতে পারে,তাহলে আবার অভিমান করবে ||

 " হ্যাঁ রে বল ?? হটাৎ এই সময় ?? "
সরমা দেবীর গলায় একটু বিস্ময় ||
 " মা,তোমাকে ফোন করতে আমার টাইম মেনে চলতে হবে?? "
" না,তা কেন, আসলে তুই বলিস কিনা অফিসে খুব প্রেসার,তাই আর কি ||"

" অফিস ছুটি নিয়েছি "...
" সব ঠিক আছে তো ?? "
রায়া আর থাকতে না পেরে হুবহু ঘটনার বিবরণ দিলো...

সরমা দেবী ফোন এর ওপর প্রান্তে এক্কেবারে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দিলেন ||
রায়া বিরক্ত হলো... 
" আঃ মা,প্লিজ,বাপি জানতে পারলে ?? হার্টের পেশেন্ট ||
একটু কন্ট্রোল কোরো নিজেকে ||"
আরও কিছুক্ষন কথা-উপদেশ ইত্যাদি চলার পর,রায়া ফোন রেখে,সাংসারিক কাজে মন দিলো ||
বারান্দায় উইন্ডচার্মটা " টুং টাং " আওয়াজ করছে,নিঝুম ফ্ল্যাট এর বাতাসে এক মাদকতা ||
কেমন যেন ঝিমঝিম ধরানো... 
দু-তিন দিন বেশ শান্তিতে কাটলো,রায়া আর সেই ... "হিমশীতল চোখের " আতঙ্কে আতঙ্কিত হোলো না ||

" সিক লিভ " শেষ হোলো,রায়া আর অপূর্ব কিঞ্চিৎ বিশ্বাসী হোলো যে,অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকেই এরকম হয়েছিল,যদি ও দুজনের মনের ভিতরেই একটা " কি আসলে " প্রশ্ন লুকিয়ে রইলো ||

পুজো এলো,রায়া-অপূর্ব কলকাতায় এলো,ঠিক হোলো অপূর্ব এর এক দূরসম্পর্কের কাকা যিনি কিনা পুরুলিয়ার এক গ্রামে থাকেন,তার বাড়িতে যাওয়া হবে,আসলে,বিয়ের কিছুদিন পরেই ব্যাঙ্গালোর পোস্টিং হবার দরুন রায়া অপূর্ব এর অনেক আত্মীয়স্বজনকেই চেনে না ||

রায়া খুব আনন্দে, ইসসসস,সত্যি কতদিন পরে,সবাই মিলে বেশ হৈ হৈ করা যাবে ||

সপ্তমীর সকালে সবাই মিলে রওনা হোলো,রায়া নিজের মা আর বাবাকেও ডেকে নিয়েছে,দু বেয়ান-বেয়াই মিলে জমজমাট ||

গ্রামের পুজো বলে কথা,শিষ্টচার আর ভক্তি অঢেল... 

রায়া লাফাচ্ছে,ছোট্ট ছাগলছানা কোলে ||
গ্রামের ভিতরে একটু ঘুরতে যাবে,কাঁধে দামি ক্যামেরা ঝোলালো,অপূর্ব জমিয়ে ক্রিকেট খেলছে,সুতরাং একাই... 
" বৌদি তুমি একা যাবে ?? "
" তো ?? আমি কি বাচ্চা মেয়ে,আরে বাবা,একা এডভেঞ্চার,বেশ থ্রিলিং ||"

রায়া ছবি তুলছে এনতার,এই গ্রামের বাচ্চাদের ছবি তোলে তো এই গাছপালা তো এই পুকুর তো এই গরুর পাল ||

এই জায়গাটা বেশ একটু নির্জন,সকালের দিকেও কেমন যেন গা ছমছম ||
একটা পড়ো বাড়ি,বোধহয় কোনো রাজা কিংবা জমিদারের হবে,রায়া গেট পেরিয়ে ঢুকতে যাবে,মোবাইলে ফোন... 
" কি রে,তাড়াতাড়ি আয়,স্নান-খাওয়া করবি কখন ?? "
রায়া পা বাড়ালো ফেরার জন্য 

ধূপ-ধুনো-গ্রাম্য কোলাহল-আত্মীয়-কুটুম সব মিলিয়ে মিশিয়ে যেন আনন্দের ঝর্ণা ||

রায়া ঠাকুরের ছবি তুলছে, 
ক্লিক-ক্লিক... 
" বৌদি,আমার একটা ছবি তোল তো "...খুড়তুতো ননদের আবদার,রায়া ক্যামেরা নিলো... 
" রেডি, স্মাইল... "
রায়া কেঁপে উঠলো,সেই হিমশীতল চোখ ||
অদ্ভুত এক আকর্ষণ,আকুলতা,মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার ||
রায়া এক দৌড়ে সোজা অপূর্ব এর কাছে ||
" কি হোলো "?? 
অপূর্ব ক্যারাম খেলছিল,রায়া গলা নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বলল ঘটনাটা ||
অপূর্ব ও নিমেষে ধাক্কা খেল ||

রায়া বাথরুমে গিয়ে ঘাড়ে-চোখেমুখে জল দিল,মাথাটা অসম্ভব যন্ত্রনা করছে,লাইট নিভিয়ে একটু শোবে,অপূর্ব এলো... 
" কি গো,আবার শরীর খারাপ লাগছে তোমার ?? কাল ফিরে যাবে কলকাতায় ?? "
" এতোগুলো লোকের আনন্দে জল পড়বে অপূর্ব,আর ফিরে গেলেই যে সমস্যার সমাধান হবে না,তুমি তো জানো,বিশ্বাস কোরো,এতোদিন পরে আবার সেই এক হুবহু এক,নাহ এটা শুধু আমার মনের ভুল নয় ফর শিওর "||

অষ্টমী-নবমী কাটলো ধুনুচি নাচ-লুচি-আড্ডা-অঞ্জলি ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে ||
রায়া সর্বদা সতর্ক এই বুঝি... 

দশমীর দিন বিকেলে বিসর্জন,আর একাদশীর দিন ভোরে কলকাতায় ফেরার পালা ||

রায়া আর অপূর্ব দুজনে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো,কিছু গ্রাম্য দৃশ্য-আকাশ-লোকাল স্কুল ||
ক্লিক-ক্লিক... 

এবারের গন্তব্য সেই পুরোনো বাড়ি || একটা লোকাল চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়ে,কথার ছলে রায়ারা জানতে পারলো ওটা এই গ্রামের জমিদার বাড়ি,প্রায় 100 বছরের পুরোনো,এবং পরিত্যক্ত,যদিও গ্রামের কিছু অসাধু ব্যাক্তিরা নিজেদের ঘাঁটি পেতেছে ওই পড়ো বাড়িতে ||
রায়া এক অদ্ভুত টানে এগিয়ে গেল,একটা অদ্ভুত আত্মীয়তা যেন তার এই বাড়ির সঙ্গে ||

ঝোপঝাড়,আবর্জনা সামলিয়ে দুজনে মূলদরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো,দুজনের এডভেঞ্চার এর নেশা একেবারে তরতর করে বাড়ছে 
একটা পেঁচানো সিঁড়ি,খুব সাবধানে পা ফেলে,উঠে ডানদিকে বিশাল হলঘর ||
অপূর্ব একের পর এক ছবি তুলছে,রায়া মগ্ন,কেমন যেন চেনা চেনা তার সবকিছু ||

যেন অনেক-অনেক দিন পর আবার সে দেখছে সবকিছু ||

" রায়া,এই দেখ,কি বিউটিফুল কাঁচের কাজ,এটা রীতিমতো সংগ্রহ করে রাখার মতো ||"

অপূর্ব একটা কাঁচের ফুলদানি খুঁজে পেয়েছে,যদিও জিনিসটার গলাটা ভাঙা,কিন্তু তারিফ যোগ্য ||

রায়া হাতে নিলো,ইক অসাবধানে আঙ্গুল কেটে গেল সামান্য ||

দুজনে পা টিপেটিপে এগিয়ে যাচ্ছে,যদিও রিস্ক,তাও এক দামাল এডভেঞ্চার ||

একটা লাইব্রেরি ঠিক হল এর পাশেই ||
পুরোনো ভাঙা দুতিনটে টেবিল আর একটা ভাঙা আলমারি ছাড়া শুকনো পাতা,ঝুল,ইঁদুর,বাদুড়... 

অপূর্ব এগিয়ে গিয়ে ছবি তুলছে,রায়া চুপ করে দেখছে,
" অপূর্ব,আলমারিটা খোলো,একটা ছবি আছে ওতে,প্লিজ বের করবে "||

অপূর্ব অবাক,রায়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো, 
" প্লিজ,বের কোরো না "... 
"তুমি কি করে জানলে,যে এখানে আলমারিতে ছবি আছে ?? "
রায়া হাসলো " মনে হোলো,তাই বললাম "||

অপূর্ব আলমারি খোলার চেষ্টা শুরু করলো,পুরোনো-ভাঙা জিনিস এবং বিপদজনক,তবুও... 
খানিক কসরত করার পরে,আলমারি আয়ত্ত করা গেল,সত্যি একটা মাঝারি আকারের ছবি ওই আগেকার দিনে রাজা-জমিদারের শখ করে নামী শিল্পীকে দিয়ে আঁকানো সেলফ পট্রেট ||
ধুলো-মাকড়সা ভর্তি,রঙচটা,উইপোকা খাওয়া ছবিটা হাতে নিলো অপূর্ব ||

শিরদাঁড়া বেয়ে যেন একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল,ছবিতে একজন অতিসুপুরুষ,পাশে বসে এক সুন্দরী রমণী,বোঝা যাচ্ছে,স্বামী-স্ত্রী,কিন্তু রমণীটি আসলে রায়ার কার্বন কপি ||
নিচে দুজনের নাম লেখা 
বিক্রমরানা - রুকমা দেবী 
যেন রায়াই ছবিটার ভিতরে পরপুরুষ এর সাথে বসে আছে,পুরুষটির চোখদুটো হিমশীতল,যেন অনেক না বলা কথা ||

রায়া,আস্তে আস্তে অপূর্ব এর কানে কানে বললো... 
" আজ তো বিসর্জন,এটাও যদি বিসর্জন দিয়ে দি,না হলে ও আমাকে ছেড়ে যাবে না ||"

বাইরে ভাসান শুরু হয়েছে,চিৎকার শোনা যাচ্ছে, 
" বলো দূর্গা মাই কি জয় "...
অপূর্ব ছবিটা ফেলে দিল,বাড়িটা লাগোয়া একটা পুকুরে,শক্ত হাতে রায়ার হাত ধরা ||
ছবিটা ডুবে গেল,রায়া বিড়বিড় করে উঠলো... 
" এ জন্মে শুধু অপূর্ব,শুধুই অপূর্ব ,শান্তিতে থেকো বিক্রমরানা... 
আমাকে ও শান্তি দিও ||"
একটা আলতো বাতাস,যেন রায়া কে ছুঁয়ে চলে গেল,রায়া বাড়িটার দিকে,শেষবারের মতো তাকালো,একটা দীর্ঘনিঃস্বাস নিলো নিজের অজান্তেই ||

দুজনে পা বাড়ালো... 
একসাথে অনেক পথ চলা বাকি যে ||

অলঙ্করণ: আশংসিতা মুখার্জি (@chitrangada_19)

Comments

Post a Comment