Suicide Note - Heart Touching Story | Piprerdol.com

 সুইসাইড নোট



জানিনা আমার মৃতদেহ পাওয়ার পর কারও হাতে এই কাগজের টুকরোটা আদৌ যাবে কিনা, তাই উদ্দেশ্য হীন ভাবেই চিঠিটা লিখছি। হ্যাঁ, আজ আমি আত্মঘাতি হতে চলেছি, চলেছি বলা ভুল হবে কারণ যে লেখাটা পড়ছো ততক্ষণ আমি আর নেই। আজ তাই জীবন যুদ্ধে আমার পরাজয়ের কারণ টুকু জানিয়ে যেতে চাই, যাতে আর কাউকে এভাবে না মরতে হয় !    

আমার তখন তিন বছর বয়স, মা মারা যান ক্যান্সারে। বাবা আবার বিয়ে করে আনেন। আমার এক ভাইও হয়। সম্পত্তির লোভে ছোট মা আমার নামে মিথ্যা দোষ চাপিয়ে বাবাকে নালিশ করেন, যে আমি ভাইয়ের খাবারে বিষ মেশানোর চেষ্টা করেছিলাম। বাবা আমার কোনো কথা না শুনে আমায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আমি কিচ্ছু জানিনা কোথায় যাব, কী করবো। রমেন কাকু আমায় রাস্তা থেকে তুলে এক অনাথ আশ্রমে নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পাস করি, আর আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী নিশ্চিত-ঠাই চ্যুত হলাম। আমার উচ্চতর শিক্ষার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু উপায় ছিলনা। আমার বই কেনার টাকা নেই উপরন্তু ১১-১২ ক্লাস এর পড়া, টিউশন ছাড়া পড়া কঠিন। এই সময়ে আমার জীবনে এক দেবতার আবির্ভাব ঘটে। তাকে দেবতা বললেও হয়তো ছোট করা হয়। আমার অবস্থা দেখে ছন্দা বসু আমাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেন, আমার বই কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে আমার টিউশন খরচ সব তিনি বহন করতেন। কিন্তু সুখ তো চিরস্থায়ী নয়... আমার জীবনে তো আরো নয়, উচ্চমাধ্যমিক এর রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি ফিরছি, শুনলাম ওনার কার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, স্পট ডেথ। তবুও আমি হতাশ হয়ে পড়িনি। স্কলারশিপ নিয়ে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হই। পি-এইচ-ডি কমপ্লিট করে গবেষনার কাজে যোগ দিই কর্মক্ষেত্রে এসে আমার এক বন্ধু জোটে। এর আগে কখনো ভালো বন্ধুত্ব পাতানোর সময় হয়নি, কারন ছোটবেলায় আশ্রম থেকে যে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল, অনাথ আশ্রম এর ছেলে বলে কেউ মিশতে চাইতো না আর বাকি সময় টা পড়াশোনা করে কেটে গেছে। এই বন্ধুটি হয়ে ওঠে আমার জীবনের মূল্যবান একজন। আমার সব কথা ওকে বলতাম আর ও যেনো শুধু আমার বাবা মা নয়, আমার সবকিছু ছিলো....


কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম, স্বার্থে অন্ধ হয়ে ও আমার আবিষ্কার চুরি করে। আমার তাতেও কোন দুঃখ নেই, আমার কষ্ট হচ্ছে এই কারণে এই যে আমি জীবনে ভালোবাসা পাইনি। অবহেলিত হয়েছি বারবার নানা মানুষের কাছে, এদের কি মানুষ বলা যায় ?। যে ঈশ্বর যুগে যুগে অবতার ধারন করে এসে ভালোবাসার মন্ত্র শিখিয়েছেন, তিনিই আমার সকল ভালোবাসার মানুষ কে কেরে নিয়েছেন। একটি গাছের বেড়ে ওঠার জন্য যেমন কোমল রৌদ্র লাগে, রোদের তেজ বাড়লে তা শুকিয়ে যায় তেমনি আমিও শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম, তার পরিবর্তে পেয়েছি শুধুই মৃত্যু আর বিশ্বাসঘাতকতা। দোষ ওদের নয়? উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে এনে দিয়েছে প্রতিযোগিতা। যার ফলস্বরূপ সবার মনে বাসা বেঁধেছে স্বার্থবোধ আর লালসা। একতা ও পরোপকার কে ভুলে মানুষ নিজের চাহিদা পূর্তির জন্যে যা খুশি তাই করে চলেছে। কিন্তু আর পারলাম না অবহেলা আর কিছু আপনজনের সঙ্গ ত্যাগ আমায় আজ জীবিতবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রনা দিচ্ছে। এই চিঠিটা জানিনা কার হাতে যাবে, পৌঁছবে কি আমার অস্ফূট এই কান্না ওই লোভী মানুষদের কাছে যারা স্বার্থের কারণে আমায় বঞ্চিত করেছিল।


‌ইতি - আবির বসু




লেখা : সৃজন মাইতি

ইনস্টাগ্রাম : @s.r.i.j.a.n_

ছবি : শ্রীলেখা দাস

Comments