Sundar-Ban | Short Article | Piprerdol.com

সুন্দর বন ?


সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের একটি জাতীয় উদ্যান এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এই স্থানের জন্যই বিশ্বে সুপরিচিত। আমাদের ভারতবর্ষে যে চারটি  বায়োডায়ভার্সিটি হটস্পট রয়েছে তার মধ্যে একটি অন্যতম হল সুন্দরবন। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা জলের পরিবেশে গড়ে ওঠা সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। যা ভারত বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান করেছে। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের বেশিরভাগ টাই  ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে  এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। এখানে নোনা-জলের কুমির সহ বিভিন্ন পাখি, সরীসৃপ এবং অবিচ্ছিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সমন্বয় রয়েছে। এটি ১৯৮৯ সাল থেকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এর ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক হিসাবে বিবেচিত হয়।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া এবং এখনে প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করেছে যার ফলে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায় না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে।
সমস্ত রকম প্রাণীর মধ্যে উল্লেখ্য মৎস্য সম্পদ। সুন্দর বনে সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত রয়েছে নোনাজলের বিপুল মৎস্য সম্পদ। তবে আজ এই একবিংশ শতকে কমছে মাছের প্রাচুর্যতা। সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির।


 আশির দশকে প্রথম চিংড়ি ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। এই চিংড়ি কমে যাবার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় সুন্দরবন এলাকার দারিদ্রতাকে। কারণ সেই সুন্দর বন এলাকায় যারা বসবাস করে,তারা এই সুন্দরবনের উপর পুরটা নির্ভরশীল। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণীজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো এই সুন্দর বন থেকে সংগ্রহ করা মাছ থেকে।
সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। তবে এই প্রজাতির মাছ গুলি সচারচর দেখতে পাওয়া যায়না। পরিবেশ বিদদের মতে,অতিরিক্ত জনসমাগম এর কারণে এই প্রজাতির মাছ গুলি দক্ষিণ ভাগে সরে গেছে। অবৈধ মৎস্য শিকার দিন দিন বেড়ে যাবার কারণে এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না।
পরিবেশবিদদের একাংশ মনে করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে সুন্দর বন এলাকার মৎস্য প্রজাতির উপর। গ্লোবাল ওয়ারমিং সমুদ্র জল তলের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক দূষণ এই মৎস্য প্রজাতির বিলুপ্তির জন্য অনেকটা দায়ী। এ ছাড়া সুন্দরবন এলাকায় অবাধ ও বেআইনি মৎস্য শিকার এই বর্তমান সময়ে মাছের প্রাচুর্যতা কমিয়ে দিয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় মাছের প্রাপ্যতা আরও  কমবে বলে জানান ভারত ও বাংলাদেশ এর বনবিভাগ সহ পরিবেশবিদরা। তাই পরিবেশ এর দিকে নজর এর পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে সুন্দরবনে অবৈধ মৎস্য শিকার।

পরিবেশ উষ্ণায়নের সাথে সাথে কিন্তু মাছের যোগান পাল্টাবে

পরিবেশ উষ্ণায়নের সাথে সাথে পৃথিবীতে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে গত কয়েক দশক ধরেই প্রতি বছর অগ্রহায়ণ থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায়  নদী  নালায় নোনা জলের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটার মডেলিং নামক বাংলাদেশের একটি সংস্থা  তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে  বিশেষ করে ইছামতি, বালেশ্বর, শিবসা, পশুর, আধারমানিক সহ বিভিন্ন নদী এবং সংলগ্ন খাল-বিলে নোনা জলের সমস্যা শুষ্ক মরসুমে আরো বাড়বে ফলে, দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলবর্তী বাংলাদেশের অনেক উপজেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলায় দেখা দেবে মিষ্টি জলের অভাব যার জন্য মাছের প্রাকৃতিক যে আবাস তা কমে যাবে।


এই মাছের প্রাচুর্যতা কমার পেছনে আরেকটি বিশেষ কারণ হল উপকূলীয় দারিদ্রতা

মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে, বিশেষত: সুন্দরবনের কাছাকাছি অনেক উপজেলাতেই দারিদ্রের হার বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকার মানুষের অর্থনীতিক অবস্থা দারিদ্র সীমার নীচে এমনকি এই এলাকার লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ এই সুন্দর বনে মৎস্য শিকার করেই তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। যার জন্য প্রশাসন চেয়ে ও এই এলাকা গুলিতে অবৈধ মৎস্য শিকার বন্ধ করতে পারে না,এর ফলে শেষ হয়ে আসছে এই বিপুল মাছের প্রাচুর্যতা।
সুন্দরবন অঞ্চলে আজকাল পাবদা,বাচা, পুঁটি, শিং, মেনি, টাকি, কালিকৈ মাছ প্রায় আর দেখা যায় না। একটি গবেষণা থেকে অনুমান করা হয় ২০৫০ সালের মধ্যে সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকায় ভারত বাংলাদেশ মিলে মাছের আবাস স্থল প্রায় অর্ধেকের মতো  (৪৯ শতাংশ পর্যন্ত) কমবে।

নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার

নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে শুধু সুন্দরবন এলাকা নয় বঙ্গোপসাগর ও মৎস্যশূন্য হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে এ মূল্যায়ন করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুদের কোনো সঠিক হিসেব নেই আর কী পরিমান মাছ ধরা যাবে তারও সীমা পরিসীমা নির্ধারিত নেই। কারণ সাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ গবেষণা বন্ধ ছিল প্রায় দুই দশক।

মাছ শিকারে ধংস হচ্ছে  প্রাণীবৈচিত্র্য

বর্তমানে কিছু অমানবিক কলা কৌশলে মাছ শিকারের  ঘটনা সামনে আসছে। যার জন্য মাছের ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে বিশালাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সেখানকার প্রানী বিচিত্র। সাম্প্রতিক এক সংবাদ মাধ্যমে এক প্রতিবেদন প্রকাশ পায় তাতে বলা হয় এখন মাছ শিকার এর জন্য জোয়ার এর পরে ভাঁটা কালে ছোটো ছোটো নৌকা করে খারি গুলিতে গিয়ে সেখানে জল মগ্ন এলাকা যেখানে মাছের প্রাচুর্যতা আছে সেখনে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা হচ্ছে। এর জন্য নষ্ট হচ্ছে জলজ ও প্রানীজ বিচিত্র।

লেখা : কবিতাপ্রেমী; https://www.facebook.com/kobitapremi09/
ছবি : GOOGLE

Comments