Top 5 Mysterious Place In Kolkata | Piprerdol.com

স্যয়ী



মাদের সবার প্রিয় শহর যাকে আমরা আনন্দ নগরী ও বলে থাকি, হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন আমি কলকাতার কথাই বলছি, কলকাতা এমন একটি শহর যাকে আমরা সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও চিনি। যেখানে বড় বড় মনি-ঋষিদের অর্থাভাব ঘটেছে। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দ, নজরুল ইসলাম, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, রাম মোহন রায় এর মত মানুষের শহর কলকাতা। আলো ঝলমলে এবং স্থাপত্য ভরা এই শহর যেমন, ভিক্টোরিয়া, সেন্টপল্স ক্যথিড্রাল, রবীন্দ্র সেতু, বিদ্যাসাগর সেতু ইত্যাদি স্থাপত্যে ভরা। এ ছাড়াও এ শহরে আরও কিছু দর্শনীয় স্থাপত্য আছে যেগুলিতে দিনের বেলা অথবা রাতের বেলা কখনই যাওয়াটা খুব একটা নিরাপদ নয়। এই সব স্থাপত্য গুলির পিছনে কিছু অন্ধকার রহস্য লুকিয়ে আছে যার কিনারা আজও করা সম্ভব হয় নি। আজ তোমাদের এরকমই কতগুলি যায়গার গল্প বলবো। বহু বছর ধরে এই রহস্যের কোনো কূল কিনারা পাওয়া যায় নি এই রহস্য গুলি অন্ধকারেই রয়ে গেছে এবং সেই খানের কিছু অদ্ভুত এবং ভৌতিক ঘটনা মানুষের চোখে পড়েছে। আজ আমি সেই সব ঘটনার কথা তোমাদের বলবো, তাহলে চলো শুরু করা যাক।

প্রথমে আমি আজকে যে জায়গার গল্প বলবো সেই যায়গাটা বহু জনপ্রিয় একটি জায়গা, আজকে আমি প্রথমে হাওড়া ব্রীজের গল্প বলবো। কথাতেই আছে "প্রদীপের নীচেই সবচেয়ে বেশি অন্ধকার " ঠিক তাই,

আন্ডার দ্যা ব্রীজঃ



হ্যাঁ ঠিক ধরেছ আমি ব্রীজের নিচের কথাই বলছি, এই মূহুর্তে কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বহুল চর্চিত হন্টেড প্লাস হল রবীন্দ্র সেতু, যাকে আমরা হাওড়া ব্রীজ নামেই বেশি চিনি।

হাওড়া ব্রীজের নিচে মল্লিক ঘাটের কাছে প্রায়ই দেখা যায় জলের মধ্যে মানুষের দেহ অথবা হাত ভেসে থাকতে, ওখানের আসেপাসের বাসিন্দাদের দাবি হাওড়া ব্রীজ থেকে জলে পরে যে সব মানুষ আত্মহত্যা করেছে অথবা দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে যারা প্রান হারিয়েছেন তাদের অতৃপ্ত আত্মাদের ওখানে দেখা যায়। এমনকি একজন সাদা শাড়ি পরিহিতা নারীকেও দেখা গেছে, যিনি নাকী কন্ঠস্বরে সবাই কে ডাকেন, আজ পর্যন্ত যারাই এই আওয়াজ শুনে ঘাটের পারে গেছে হয় তাদের মৃত্যু হয়েছে নাহলে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এই ধরনের ঘটনা বেশিরভাগই রাত্রি এবং ভোরের সংযোগ সময়ে ঘটেছে বলে ওখানকার মানুষের দাবি।

এবার বলবো এমন একটি জায়গার কথা, যেই বাড়িটি প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো এক বাড়ি, সেই ইংরেজ আমল থেকে এই বাড়ির অবস্থান এবং কলকাতার হেরিটেজ। সাধারনত এইসব বাড়ির প্রচুর ইতিহাস হয় এবং প্রচুর রহস্য লুকিয়ে থাকে, আমি ন্যাশনাল লাইব্রার‍্যির কথাই বলছি। কেউ কি ভেবেছ এই হাজার হাজার বই এর মাঝে কত রহস্য লুকিয়ে আছে, সেই ২৫০ বছর পুরোনো বাড়িটিতে?



দ্যা সিক্রেট চেম্বারঃ




২৫০ বছরের পুরোনো এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন তৎকালীন রাজা মীর জাফর। আলিপুরে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। তারপর তিনি রাজত্ব ছাড়ার সময় ইংরাজদের এই বাড়িটি দিয়ে যান। ইংরেজ আমলে তৎকালীন বড়লাটদের কার্যালয় ছিল এই বাড়ি। স্বাধীনতার পর বাড়িটিকে সংরক্ষনের জন্যে এই বাড়িটিতে ন্যাশনাল লাইব্রার‍্যি করা হয়। বর্তমানে এই হেরিটেজ বাড়িটিতে সংরাক্ষানের কাজ চলছে। এই সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে আরকিওলজিকাল সারভে আফ ইন্ডিয়ার আর্কিটেক্টরা এক্তা প্রাচিন ঘর বা সিক্রেট চেম্বার খূজে পেয়েছেণ, অণেক চেষ্টা করেও ঐ ঘরে ঢোকা সম্ভব হয়নি কারণ ঐ ঘরে ঢোকার কোণো দারজা নেই এমনকি কোণো চোরা দরজা ও খুজে পাওয়া যাইনি, তাই আর্কিটেক্টরা আশঙ্কা করছেন যে এই ঘরটি খুললে হয় প্রচুর মনি মাণিক্য পাওয়া যাবে অথবা প্রচুর কঙ্কাল পাওয়া যাবে বলে তারা মনে করছেন, খুব সম্ভবত কোনো মানুষের সমাধিও হতে পারে। ইংরেজ আমলে এরকম টর্চার রুমের কথা আমরা সবাই পরেছি ইতিহাস এ। তখনকার দিনে ইংরেজরা বিপ্লবীদের কাছ থেকে খবর বের করার জন্যে একরকম জানালা দরজা বিহীন অন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে দিতেন চোরা দরজা দিয়ে এবং সেখানেই তাকে আটকে রাখা হত যতক্ষণ না সেই মানুষটি ইংরেজদের প্রয়োজনীয় খবর দিচ্ছে। এমন অনেক সময় হয়েছে এই টর্চার রুমে বন্দী দশায় বহু মানুষ ভয়ে আতঙ্কে মারাও গেছে। তাই এই সিক্রেট চেম্বার কে খুলে দেখা জরুরি, তাই আরকিওলজিকাল সারভে আফ ইন্ডিয়ার এক অধিকর্তা তাই ঠিক করেছেন যে একটি ছোট গর্ত করা হবে দেওয়ালে প্রথমে এবং মেশিনের মাধ্যমে দেখা হবে কি আছে ভিতরে। যদিও ভালোভাবে দেখলে দেখা যাবে এই বাড়ি এখন সম্পূর্ণ নয় তাই হয়তো এই বাড়িতে আরও কোন সমাধি অথবা সিক্রেট চেম্বার থাকলেও থাকতে পারে।

কি ব্যপারটা বেশ থ্রিলিং না? বেশ রোমাঞ্চকর এবং ভয়েরও, তাই না? তাহলে পরের গল্পটা আরো থ্রিলিং,  তোমাদের এক জমিদার বাড়িতে নিয়ে যাই।

সিক্রেট অফ ডলসঃ



জমিদারি আমলে এই বাড়িটি বিখ্যাত ছিল, কারণ এই বাড়ির চারিদিকে প্রচুর সুন্দর সুন্দর পুতুলের মূর্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো সেই সময় এর এই মূর্তি গুলির জন্যেই এই বাড়িটা বিখ্যাত ছিল , পরবর্তীতে ইংরেজ আমলে এই জমিদার বাড়িটিকে ওয়ারহাউসে পরিনত করা হয়। সেই সময় ইংরেজদের আমলে জলপথে বাণিজ্য চলতো এবং গাঙ্গার ধারে এই সব বাণিজ্যের জিনিস এই বাড়িতেই রাখা হত। সেই সময় বিভিন্ন বাবুরা ইংরেজরা বিভিন্ন মহিলাদের এই বাড়িতে আনতেন এবং তাদের ভোগ করতেন, শারীরিক নির্যাতন করতেন এবং নিজেদের এই অপরাধ ঢাকতে তাদের হত্যা করতেন। পরবর্তীকালে একজন লোক এই বাড়িটি কিনে নেন, তিনি এবং তার কিছু চাকর ওই বাড়িতে থাকতেন, কিছুদিন পর তিনি তারপর পর চারজন চাকরের উপর একই ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে তাদের হত্যা করেন, এই বাড়ির সামনের ফাকা যায়গায় এই চারজনের দেহ মাটিতে পুঁতে দেন আজও ওই বাড়ির সামনে ওদের দেহ ওখানেই রাখা আছে। যদিও বর্তমানে ওই বাড়ির নিচে মানুষজন বসবাস করে কিন্তু তারাও বিকালের পর দুইতলা বা তিনতলাই উঠতে ভয় পান। শুধু রাতে কেন দিন দুপুরেও ওই বাড়িতে কোন মহিলার হাসি অথবা আর্তচীৎকার শুনতে পাওয়া যায় এবং কখনও কখনও সাদা শাড়ি পরিহিতা কোন নারীকে অথবা কোন বস্তুকে অস্বাভাবিক ভাবে ছুটে বেড়াতে দেখা গেছে অথবা কোনো মহিলাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। লোকে বলে ওই বাড়িতে আজও ওই সব নির্যাতিত, নিপীড়িত, অতৃপ্ত আত্মারা আসেন তাই ওই জায়গাটিকে রহস্যময় এবং ভৌতিক আক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই বাড়িটির মত গাঙ্গার ঘাটের কাছে এমন ভৌতিক বাড়ি আর নেই।

ইংরিজিতে একটা কথা আছে “হিস্ট্রি রিপিট ইট শেল্ফ” এই কথাটা কি তুমি বিশ্বাস কর?

অদৃশ্য ফিটান গাড়ির গল্পঃ



১৭৭৭ সালে স্যার থমাস লয়াল এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জুনিয়ার স্টাফেদের জন্য মানে বর্তমানে আমরা যারা ক্লারিকাল পোস্টে কর্মরত তাদের জন্যে। আমরা সবাই ইতিহাসে বিবাদিবাগ এর কথা পরেছি, কিভাবে বিনয় বসু , বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত তৎকালীন ইন্সপেক্টর জেনারাল এন এস সিম্পসনকে রাইটার্স বিল্ডিং এর ভিতরে ঢুকে সার্বসমক্ষে গুলি করে হত্যা করে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বার্তা পাঠায় যে ভারতে তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে, তারপর বিনয়, বাদল, দীনেশ এর কি হয় তা তো আমরা সবাই জানি, বর্তমানে আমরা সবাই জানি কিছুদিন আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রধান কার্যালয় ছিল এই বিল্ডিং কিন্তু এখন এই বিল্ডিং সংস্কারের জন্য এখান থেকে অফিস সরিয়ে নবান্নে নিয়ে যাওয়া হয়। রাইটাস বিল্ডিং এর অনেক কর্মচারীর কাছে শোনা গেছে যে এখন নাকি এমন ঘরও আছে যে ঘর কোনোদিনো খোলা হয়নি কিন্তু সেই ঘরের ভিতর থেকে অনেক অদ্ভত অদ্ভত আওয়াজ শোনা গেছে। কোন মহিলার কান্না অথবা চিৎকারের আওয়াজ আজও শোনা যায়। এছাড়াও অনেকে বলেন ওখানে নাকি এখনোও এন এস সিম্পসনকে দেখাযায়, একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে এখন নাকি মাঝ রাতে একটা ফিটান গাড়ী এসে দফতরের সামনে দাড়ায় এবং একজোড়া সাদা বুট জুতো সেই গাড়ী থেকে নেমে দফতরের ভিতরে চলে যায় এবং ওই ফিটন গারিটিও আস্তে আস্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, তাই মনে করা হয় এই বুট জুতোটি হলেন সিম্পসন, পরে দেখা গেছে যে ঘরে সিম্পসন বসতেন সেই ঘরের সব জিনিস অগোছালো করা থাকতো পরের দিন সেই দেখেই সবাই অনুমান করেন যে সিম্পসন আজও নাকি ওই দফতরে ঘোড়া ফেরা করেন।

কি একটু একটু ভয় লাগছে আমারো লেগেছিল যখন আমি এই গল্পটা আমার স্যার এর কাছে শুনি। আমার স্যার ছিলেন রাইটাস বিল্ডিং এর প্রাক্তন কর্মী উনি আমাকে এই জায়গার অদ্ভত ভূতুরে গল্পগুলো বলতেন।

আমদের শহরে এরকম রহস্যময় ভূতুরে অদ্ভত গল্প চারিদিকেই ছড়িয়ে আছে যেমনঃ গণেশ টকিস এর ঘটনা। গণেশ টকিস এর সেই ভয়াবহ ব্রিজ দুর্ঘটনার কথা মনে আছে? সেই নির্মীয়মাণ ওভার ব্রিজটি দিনেদুপুরে শহরের মাঝে ভেঙ্গে পরে কত মানুষের প্রাই চলে যাই কত মানুষ তাদের অঙ্গ হানী হয়, হ্যাঁ সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা যা সারা দেশ সহ পুরো পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছিল। বর্তমানে শোনা যায় দিনে দুপুরে অথবা রাতের দিকে আচমকা কোন আহত বেক্তিকে জল চাইতে দেখা যায় কিন্তু জল দিতে নেমে দেখা যায় কেউ নেই আশেপাশে, মাঝরাতে ট্যাক্সি থামিয়ে গাড়িতে ওঠেন যাত্রী খানিকদূরে গিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার জিজ্ঞাস করলেন “দাদা কোথায় যাবেন?” পিছনে ফিরে দেখা যায় পিছনের যাত্রী উধাও, কোথায় গেলেন যাত্রী? কারুর কাছে সে প্রশ্নের কোন উত্তর নেই, কেউ জানেনা। এই ঘটনা যে শুধু গণেশ টকিসই থেমে তা কিন্তু নয় শহরের আনাচে কানাচে এইরকম গল্প লুকিয়ে আছে। যাইহোক আজ তবে এখানেই শেষ করা যাক। পরে আরও এরকম গল্প নিয়ে আবার একদিন বসা যাবে।............ 



লেখা : মধুরিমা বোস 
IG : @caitlene_cuper
ছবি : গুগল



Comments