Tea Buzz Bengali | Short Article | Piprerdol.com

"চা"বাজ বাঙালি 


বাঙালির প্রিয় পানীয় চা, পাড়ার মোড়ে, কলেজ ক্যান্টিনে, রাস্তায় যেখানেই চায়ের দোকান সেখানেই দেখবে মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বাঙালি, কত যে গুরুগম্ভীর আলোচনা করে তা বোধহয় সোশাল মিডিয়ায় ও পাওয়া যাবে না। এমন বাঙালি ও আছে যাদের চা কথাটা শুনে অথবা গন্ধে চা তেষ্টা পায়। এরকমি একদল চা প্রেমিদের কথা মনে পড়ে গেল,

নীরজ, উপেন কোথায় রে? কখন ওকে ক্যান্টিনে ডাকলাম চা খেতে, কোথায় ও? নীলা জিজ্ঞাসা করল।

নীরজ : ওর তো বোধহয় ক্লাস শেষ হয় নি, ক্লাস শেষ হলেই চলে আসবে।

নীরজ ও নীলা দুই জন ইংলিশ অনার্সের ছাত্র আর উপেন ইকনমিক্স এর।

এই নীলা...... দুর থেকে কেউ একজন ডাকল

নীলা : আরে উত্তরা যে... কবে ফিরলি?
আয় বোস বোস আমরাও সবে এসেছি এখন আড্ডা শুরুই হয় নি, উপেন, শ্রেয়া, উজান, অরুন, মিতা এরা না এলে শুরুই হবে না। তা বল কেমন ঘুরলি দার্জিলিং?

উত্তরা : এইতো কালই ফিরলাম, ভিষন সুন্দর রে যায়গাটা, ভোরবেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয় দেখা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার, সে যে কি সুন্দর দৃশ্য তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। জানিস আমি আমার স্যারের কাছে শুনে ছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয় দেখতে গেলে ভাগ্যের প্রয়োজন, কেউ একবারে দেখতে পায় আবার কেউ পঁচিশ বারেও দেখতে পায় না, তবে আমার ভাগ্যটা ভালই বলতে হবে প্রথমে একটু মেঘ ছিল পরের দিকে মেঘ সরে গিয়ে পরিস্কার আকাশে সেই অতি প্রতীক্ষিত দৃশ্য দেখে চক্ষু সার্থক।

নীলা : এই তুই দার্জিলিং এ গেলি আর ওখানকার চা খাস নি কি বাঙালি মেয়ে তুই, বাঙালি হয়ে দার্জিলিং গেলি আর চা খেলি না? আমি তো কেরালা, আরাকু, সব জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন রকম চা খেয়েছি, কি যে করিস না, বাঙালি নামে কলঙ্ক তুই।

উত্তরা : কি যে বলিস না, দার্জিলিং যাব আর দার্জিলিং টি টেস্ট করবো না সেটা আবার হয়? জানিস বড় বড় পাহাড়ে দিগন্ত বিস্তৃত শুধু চা বাগান আর চা বাগান, বড়, মাঝারি, ছোট সব ধাপে ধাপে চা গাছ লাগান আর ওখানকার মেয়েরা পিঠে বড় ঝুড়ি নিয়ে চা পাতা তোলে আর ঝুড়িতে রাখে। ঐ চা বাগানের মধ্যে একটা আটচালায় দার্জিলিং টি বিক্রি করছিল ব্যাস আর কি চাই, চলে গেলাম চা খেতে, সেকি রং, স্বাদ, গন্ধ একেবারে অনবদ্য বিশ্বাস কর, দার্জিলিং এর চায়ের কাছে অন্য চা কিছুই না।

নীলা : ঠিক ঠিক, আমিও রে এত যায়গায় চা খেয়েছি কিন্তু দার্জিলিং এর মত স্বাদ আর কোথাও পাই নি।

উপেন : এসে চেয়ারটা টেনেই জিঞ্জাসা করল কি রে চা টা কিছু বলেছিস? বলবি তো, এই তো দেখে এলাম শ্রেয় আর মিতা আসছে, অরুন গেছে উজানকে আনতে, এখনি চলে আসবে সবাই আর এসেই চা চা শুরু করবে।

নীরজ : তো বল কি খাবি, সাতটা স্পেশাল মশালা চা বলি, আর নীলা তুই কি খাবি? গ্রীন টি না মশালা চা?😂😂😂😂

নীলা : সবাই মশালা চা খেলে আমিও তাই খাবো এতে এরকম হাসার কি আছে?🙄

উপেন : একটু মুচকি হেসে, আরে না না তুই তো আবার ডায়েট সায়েট করিস তাই আর কি 😄😄

উজান : ডায়েট? কে ডায়েট করছে, নীলা? 😄😄
হ্যাঁ হ্যাঁ সামনে এক থালা বিরিয়ানি বসিয়ে দে, দেখবি দিব্বি খেয়ে নিয়েছে, ও আবার করবে ডায়েট 😂😂

নীলা : মোটেই না, আর তুই ঢুকেই শুরু করে দিলি?

উপেন : ঢুকতে ঢুকতে শুনছিলাম কি যেন তুই আর উত্তরা আলোচন করছিলি? চা, তাই তো? আচ্ছা তোরা স্ট্রবেরি টি খেয়েছিস?

অরুন : স্ট্রবেরি টি? সেটা আবার কি? আমি তো জানতাম স্ট্রবেরি মিল্কসেক হয়, স্ট্রবেরি টি হয় বলে তো কিছু জানতাম না! কিন্তু সেটা দেখতে কেমন? খেতেই বা কেমন?😳

উপেন : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, কেরলা গেছিস কখন? ওখানকার একটা স্পেশাল চা হল স্ট্রবেরি টি।

উজান : দেখতে কেমন হবে নিশ্চই গোলাপী আর মিষ্টি তো হবেই, কি তাইতো?

উপেন : কিছুটা ঠিক বলেছিস, দেখতে গোলাপী রঙের ই হয় কিন্তু খেতে অনেকটা কস্টা স্বাদের হয়, তবে মোটের উপর ভালোই খেতে।

অরুন আর উত্তরা এক সাথে : কে যেন সেদিন চকলেট টি এর ব্যাপারে বলছিল!?

নীরজ : আরে ঐ তো শ্রেয়া আর মিতা,
ওরা আগের বছর উটি গেছিল মনে হয়, ওখানে‌; দারা এলেই জিঞ্জাসা করব।

অরুন অনেকক্ষন ধরে কলেজের গীটারটাকে নিয়ে সুর মেলাচ্ছিল হঠাৎ বলে উঠলো, উজান একটা গান ধর তো....চা রিলেটেড,

প্রসঙ্গত উজান খুব ভালো লোকগীত গায়।
উজান গান ধরল,

"একটি কলি দুইটি পাত, তাহাই তো পাতের ভাত......."🎸🎤🎶

উজানের গান শেষ হতে না হতেই শ্রেয়া আর মিতা এসে উপস্থিত,

শ্রেয়া : কিরে তোরা আবার সেই চা চা শুরু করেছিস, তোরাও বলিহারি চা ছারা আর কিছুই যেন ভাল লাগে না তোদের, চারিপাশে দেখ কি হচ্ছে কি চলছে,

মিতা ও মাথা নেড়ে সমর্থন করল শ্রেয়াকে।

অরুন : এই তুই চুপ কর তো, সব সময় সিরিয়াস! চা চা করব না তো কিসের বাঙালি হ্যাঁ? ভাই চা হল বাঙালির ইমোশন, নস্টালজিয়া, চা ছারা বাঙালি আর নুন ছাড়া তরকারি দুই সমান, সত্যিই তোরা মেয়েরা না বাঙালির ইমোশনটাই বুঝলি না শিখলি ও না।😔

মিতা : মোটেই না। 🙄

নীরজ : উফ! এই তো ভালোই তোদের চকলেট টি এর ব্যাপারে কথা হচ্ছিল বেশ, ফের ঝামেলা কেন? আচ্ছা মিতা চকলেট টি কেমন খেতে হয় রে?

মিতা : আরে ওরা দুধের মধ্যে রোস্টেট কোকো বিন্স পাউডার আর ওদের একটা স্পেশাল চকলেট পাউডার আছে ওইটা দিয়ে বানায়, বেশ..বেশ ভালো খেতে অনেকটা হট চকলেটের মত কিন্তু মাইল্ড।

শ্রেয়া : এই চকলেট টি বলতে মনে পড়ল, সরোবর যাবি? শুনেছি ওখানে ভাল চকলেট টি পাওয়া যায় চল একদিন সবাই মিলে যাই।

উজান : এই তোরা ক্যামোমাইল টি খেয়েছিস অথবা তন্দুর চা?

নীলা : তন্দুর চা! সেটা আবার কি?

উত্তরা : নতুন বেরিয়েছে, তুই "আইরিশ আইসক্রিমের" ভিডিও টা দেখেছিলিস? ঠিক ঐ ভাবেই বানানো হয় অনেকটা। একটা ধুনুচির মধ্যে বানানো হয়, এখনো টেস্ট করিনি তবে ইচ্ছা আছে করার, আর ক্যামোমাইল টি হল এক কথায় স্ট্রেস রিলিজার শুনেছি খেলে নাকি ক্লান্তি দূর হয় আর ঘুম হয় ভাল।

বলতে বলতেই ক্যান্টিনের ছেলেটি চা নিয়ে এল,

দাদা তোমাদের মশালা চা...... ☕

অরুন : তবে হ্যাঁ, আমরা এত বাইরে বাইরে চা খেয়েছি কিন্তু আমাদের ক্যান্টিনের সিধু দার হাতের স্পেশাল চা এর কোন জবাব নেই, কি বলিস তোরা?

সবাই একসাথে হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছিস, 😂😂😋

সিধু : 😊😊

নীলা : আচ্ছা অনেক হল বাঙালির চা প্রেমের গল্প, এবার সবাই তারাতারি চা টা খাও নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে, তখন জল আর চায়ের কোনো পার্থক্য থাকবে না। ☕

ক্লাসে চল, আর সবাই কলেজের গেটে দাঁড়াস একসাথে বেরবো।


লেখিকা : মধুরিমা বোস
IG : @caitlene_cuper

ছবি : পৌলমী ঘোষ
IG : @artsy_girl_poulami

Comments

Post a Comment