Failure - A Short Story | Piprerdol.com

-:ব্যর্থতা:-



আমায় ইহলোকের মুখ দেখিয়ে মা পরলোকে চলে গেলেন।আমার আর মা বলে ডাকা হয়নি কাউকেই।।
আমার বাবা সেদিন আমার জন্য দুটো নতুন বই কিনে ফেরার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায় রাস্তার মোড় এ।। খবর পেয়ে ছুট্টে যাই আমি।।ডাক্তার বলেছিল,ব্রেন টিউমার,অনেক খরচ।চোখের সামনে চলতে থাকা দেওয়াল ঘড়িটা দেখতে দেখতে চলে যায় বাবাও।।
আমার আর পড়াশুনা হয়ে ওঠেনি।স্কুলের মাস্টার মশাই খুব ভালোবাসতেন আমায়।তার দৌলতে কমর্শালায় একটা কাজ জুটে গেলো।লোহা পেটানোর কাজ।কাজ করতে করতে কবিতা লিখছি তখন।।দুই চোখে স্বপ্ন "কবি" হবই একদিন।কিন্তু সেখানে লোহা পেটাতে গিয়ে বুঝলাম,সমাজের আগুনে উত্তপ্ত লোহাতে,সময় হাতুড়ির আঘাতে মানুষের আকৃতি আর গঠন কেমন বদলে যায় অনায়াসেই।।কিভাবে সবাই বাস্তববাদী হয়ে ওঠে।।
আমার একটা লেখাও প্রকাশ পায়নি কোথাও।ডায়রির পাতায় শুধু দু এক ফোঁটা জল সাথে ভিজে গেছে অক্ষর আর আমার চাপা চিৎকার গুলো। শুধু এক যুবতী জানতো সে কথা।একমাত্র সে ' ই পাতা উল্টে পড়েছিল সেগুলো।প্রেমেও পড়ে আমার।সেতো আমার ছিলই,কিন্তু বাস্তব বড়োই নিষ্ঠুর।জীবনের কণ্টক ময় বেড়াজালে তার হতে পারিনি আমি।।
ভেঙে গেলো সম্পর্কটা।তার রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো ডায়রি ভরাতে পারেনি বেশিদিন।বয়সের নিয়ম মেনে বিয়েও করি একজন কে,নাম তার অপর্ণা।শারীরিক দায়বদ্ধতার খাতিরে তার গর্ভে আমার সন্তান বাসা বাঁধে ।
কিছু সময় পর জন্ম নিল হৃদরোগ আক্রান্ত,বোবা,অচল একটা দেহ।জন্মের পর থেকেই অক্সিজেনের নল আর ওষুধ যার ছায়াসঙ্গী।

আমার আর বাবা ডাক শোনাও হলোনা।এখন বয়স ষাটোর্ধ্ব ।

সেদিন কাজ থেকে ফিরে ঘরে ঢোকার দরজাটা খোলাই পেলাম।দরজার সামনে একটা অতিরিক্ত পুরুষ জুতো রাখা।আড়ালে ভিতরে উকি মারতেই,বিছানায় একে অপরকে জড়িয়ে থাকা একজোড়া মসৃণ আর একজোড়া লোমশ পা দেখতে পেলাম শুধু।তার সাথে শুনেছিলাম অতৃপ্ত যৌনতার চিৎকার।।আর শুনতে পারছিলাম না।।এক দৌড়ে বেরিয়ে চলে এলাম বাইরে।।

সেদিন অনেক রাতে বাড়ি ফিরে অপর্ণাকে বলেছিলাম,"দরজাটা বন্ধ করে রাখলেই পারতে"।
সকালে ঘুম থেকে উঠে অপর্ণাকে আর বাড়িতে দেখতে পাইনি।তার কিছু পুরনো শাড়ি শুধু মশারির দড়িতে ঝুলতে দেখেছিলাম।
বয়স হয়েছে তাই কাজটাও গেছে চলে।বাবার রেখে যাওয়া বাড়িটাও বন্ধকে গেছে এই ক মাস হলো।কি করবো আর চলছিল না যে।ছেলের ওষুধ,বাড়ি খরচ কোথা থেকে আসবে এত টাকা?কদিন বেশ ভালোই চললো।আমি তখনও কাজ খুঁজছি।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ছেলের ওষুধ শেষ।বিছানায় ছটফট করছে শ্বাসকষ্টে।অপর্ণার ঠাকুরের আসন থেকে কুড়িয়ে ২২ টি টাকা পাওয়া গেলো শুধু।ছেলেটা ছটফট করছে অসম্ভব,খাটটা কাপছে।অসহ্যকর সেই দৃশ্য।আমি ছেলের মাথার নীচ থেকে বালিশ টা কেরে নিলাম।চেপে ধরলাম ওর মুখের ওপর।ছেলেটা আরও ছটফট করতে লাগলো, 
আরও, আরও
......মুহূর্তে সব শান্ত।।
এখন আমি কংক্রিটে মোড়া শহরের এক রেললাইনের পাশে বসে লিখছি।আমার পুরোটা জীবন জুড়ে খালি ব্যর্থতা,আর কিছুই নেই ।আমার সাথে কিছু ব্যর্থ মুখও কাটা পড়বে আজ।একটা ব্যর্থ সন্তান,একটা ব্যর্থ ছাত্র,একটা ব্যর্থ কবি,একটা ব্যর্থ স্বামী,একটা ব্যর্থ বাবা আর সর্বোপরি একটা ব্যর্থ মানুষ।।আজ পৃথিবীর সব ব্যর্থতা নিয়ে মাথা পেতেছি এই রেললাইনে।কিছু সময়ের অপেক্ষা আর তারপরেই আমার সাথে প্রতিটা ব্যর্থ চরিত্র মিশে যাবে এই মাটির জৈবতায়।ওই যে ট্রেনও আসছে....
ঝন ঝন ঝন ঝন ঝন ঝন....
চোখ বুঝলাম আমি।

একটা ধারালো হাওয়া আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।চোখ খুলে বুঝতে পারলাম,
 আবারও আমি ব্যর্থ হয়েছি......প্রতিবারের মতোই।



লেখক: উদিত মুখার্জী

ছবি : GOOGLE

For Food Recipes Visit - https://www.chillionfire.com





Comments